শ্রী নিত্যানন্দ মহালদার ব্যুরো চীপঃ
বটিয়াঘাটা উপজেলার শেষ সীমানা প্রত্যন্ত অঞ্চল উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা সুরখালী ইউনিয়ন। যেখানে আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫০০ হেক্টর। এখানকার পানি, মাটি ও বাতাস লবণ থাকায় আমন ধান কাটার পর অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো একমাত্র পানির অভাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ও মাটিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। এখানকার মাটিতে ৮ ডিএস/মি: লবণাক্ততা মিলেছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। যার ফলে এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি জমিতে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় এই ইউনিয়নে ৩০ টি মিনি পুকুর খনন করা হয় এবং আরও ১০ টি চলমান রয়েছে। যার ফলে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মিনি পুকুর ভিত্তিক প্রথম বিনা চাষে ডিপলিং পদ্ধতিতে ১২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। যার থেকে কৃষকেরা নিট লাভ পেয়েছিল দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। মিনি পুকুর ভিত্তিক ১৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল। যার থেকে কৃষকেরা নিট লাভ পেয়েছিল এক লক্ষ তিতাল্লিশ হাজার টাকা। মিনি পুকুর ভিত্তিক ৩৫ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছিল। যার থেকে কৃষকেরা নিট লাভ পেয়েছিল ১৪ লক্ষ টাকা। এবার আরও আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে অফসিজন তরমুজের আবাদও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ সালে ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রকল্পের ১০ টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই ইউনিয়নের বারোআড়িয়া, ও সুন্দরমহল গ্রামে ঘেরের পাড়ে প্রথম অফসিজন তরমুজের আবাদ শুরু করা হয়। প্রদর্শনীর ভালো অবস্থা দেখে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। যার ফলে ঐ বছরই আবাদ হয় ৭৫ বিঘা জমিতে। ২০২৩ সালে আরও বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের বারোআড়িয়া, সুন্দরমহল, কোদলা, শম্ভুনগর ও রায়পুর গ্রামে প্রায় ২৭৫ বিঘা জমিতে অফসিজন তরমুজের আবাদ হয়। যার থেকে আয় হয় দুই কোটি বাষাট্টি লক্ষ টাকা। এটা কৃষকদের একটা বড় অর্জন এবং ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। আর প্রকল্প যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কোন কোন জায়গায় দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এবং আশা করি দক্ষিণ অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকার কৃষি একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরদার আব্দুল মান্নান বলেন, ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ অঞ্চলের উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার কৃষি এবং শস্য নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবুবকর সিদ্দিক জানান, ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমি থেকে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনের একটি অন্যতম প্রযুক্তি হিসেবে কাজ করছে ক্লাইমেট -স্মার্ট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বেকার যুবকেরাও কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
Comments
Post a Comment